পুরুষের লিংগের আকার ও নারীর যৌন তৃপ্তি

যৌন মনন্তত্ত্ব বড়ই বিচিত্র। কিছু কিছু পুরুষ গভীর
ভাবে বিশ্বাস করে যে তারা পৃথিবীর যেকোন
নারীকে সহবাসে পরিতৃপ্ত করতে সক্ষম, কিন্তু এর
বিপরীত চিত্রও আছে, যেখানে দেখা যায় অনেক
পুরুষেই এই ভয়ে ভীত যে নারিকে দৈহিক
পরিতৃপ্তি দেবার ক্ষমতা তার নেই। দু’দলেরই
বিশ্বাস যে, নারীকে সহবাসে পরিতৃপ্তি দানের
ক্ষমতা পুরোপরি পুরুষের লিঙ্গের উপর নির্ভর
করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সফল সহবাস এবং এই বদ্ধমূল
বিশ্বাস কি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত?
যতবার নারীর সঙ্গে সহবাসে লিপ্ত হবে ততবার
পুরুষ একইরকম পরিতৃপ্তি নিজে অনিভব করবে এবং
নারীকেও সেই পরিতৃপ্তি দিতে পারবে এমন
ধারণা নিতান্তই ভ্রান্ত ও অমূলক, আবার
নিজেদের যৌন সক্ষমতা সম্পর্কে পুরুষের অহেতুক
দুশ্চিন্তাও তাদের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর, এবং তা
পুরুষ ও নারীর মিলনে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে।
এইসব ভীতির অধিকাংশেরই মূলে যে কারণ
বর্তমান তা হল অজ্ঞতা। এই অজ্ঞতা নারী ও পুরুষ
দুজনেরই মানসিকতার প্রভূত ক্ষতিসাধন করতে
পারে এবং চরমানন্দ অর্জনের ফলেও তা বিশাল
প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে।
প্রায় প্রত্যেক পুরুষই তার জীবনের কোনও না
কোনও এক সময়ে নিজের লিঙ্গের আকার নিয়ে
চিন্তা করতে দেখা যায়। ছোট ছোট ছেলেদের
অনেককেই দেখা যায় তাদের কার লিঙ্গ আকারে
কত বড় তাই নিয়েনিজেদের মধ্যে গভীর ভাবে
আলোচনা করতে। তেমনই যেসব পুরুষের লিঙ্গ
আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট তাদের অনেকেই
অহেতুক এই দুশ্চিন্তায় ভোগেন যে হয়ত বিবাহিত
জীবনে তিনি তার জীবনসঙ্গিনীকে যৌন
পরিতৃপ্তি দিতে পারবেন না আর তার লিঙ্গের
ক্ষুদ্রাকৃতিই এই অক্ষমতার জন্য দায়ী।
ক্রমাগত্মনের কোণে এই অহেতুক ভ্রান্তি পুষতে
পুষতে এক সময় সেই পুরুষ যদি কোনও মানসিক
ব্যাধিতে আক্রান্ত হন তবে তা আশ্চর্যের কিছুই
হবে না।
যে পুরুষ এই ধরণের ভ্রান্ত ধারনা মনে পোষণ
করেন অথবা যে নারীর মনে এই ধারনা জম্ম
নিয়েছে যে, তার পুরুষ সঙ্গীর লিঙ্গের আকৃতি
ক্ষুদ্র তাই তিনি তাঁকে যথেষ্ট যৌন পরিতৃপ্তি
সহবাস কালে দিতে পারেন না, তারা দুজনেই
স্বেচ্ছায় এক বিপর্যয়ের পথে এগিয়ে চলেছেন যা
তাদের যেকোন ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। স্ত্রী
পুরুষ, শ্রেণী, অর্থনৈতিক মাপকাঠি এবং
শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে এ এক নিদারুণ
সত্য।
এখানে অনিবার্যভাবে চিকিৎসকদের প্রসঙ্গ এসে
পড়ছে—আপামর জনসাধারণের কাছে
যৌনজ্ঞানকে সবরকমের সংস্কারমুক্ত অবস্থায়
পৌঁছে দেওয়া যাদের অন্যতম নৈতিক ও পেশাগত
দায়িত্ব। ১৯৫০-এর দশকে আমেরিকার এক বিখ্যাত
মেডিক্যাল কলেজের মনসমীক্ষণ বিভাগের
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সমীক্ষা চালিয়ে এই
সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, শুধু সাধারণ মানুষই নয়,
বহু অভিজ্ঞ চিকিৎসকও এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী
যে, সহবাসের সময় নারীকে পুরুষের পরিতৃপ্তি
দানের প্রশ্নটি পুরুষের লিঙ্গের আকৃতির ওপর
নির্ভরশীল।
ইতিহাসের দিকে একবার পেছন ফিরে তাকালে
দেখা যাবে লিঙ্গের আকার সম্পর্কে পুরুষের
দুশ্চিন্তা যুগ যুগ ধরে মনুষ্য সমাজে প্রবহমান।
প্রাক-কল্মবো মেক্সিকোর কিছু কিছু অঞ্চলে
খননকার্য চালিয়ে প্রত্মতাত্ত্বিকের এমন অনেক
মাটি ও পাথরের তৈরি লোকলিল্পের নিদর্শন
পেয়েছেন যাদের গঠন দেখে বোঝা যায় যে
আসিসযুগেও সহবাসকালে নারীকে পূর্ণ পরিতৃপ্তি
দানের চিন্তা পুরুষের মনকে আচ্ছন্ন করে রাখত।
মাটির তৈরি এরকম অসংখ্য নিদর্শন সেখানে
পাওয়া গেছে গেছে যেগুলো বর্ধিত আকারের
পুরুষের লিঙ্গের প্রতিরূপ। রেনেশাঁসের যুগে
সমাজের ওপরতলায় কিছু শৌখীন মানুষ এক ধরনের
কৃত্রিম আবরণ দিয়ে তাদের লিঙ্গ ঢেকে রাখত
এবং এর ফলে তাদের লিঙ্গের আকার বৃদ্ধি
পেয়েছে বলে মনে হত। সমাজতাত্ত্বিকেরা
অস্ট্রলিয়ার বনাঞ্চলে কিছু লুপ্তপ্রায় আসিস
মানব গোষ্ঠীর সন্ধান পেয়েছেন যারা পাতলা
সুতোর সাহায্যে তাদের পুরুষাঙ্গা জোরে টেনে
বেঁধে রাখেন কোমরের সঙ্গে, এর উদ্দেশ্য একটাই,
পুরুষাঙ্গের আকার বাড়ানো। তবে শুধু লুপ্তপ্রায়
আদিম মানব গোষ্ঠীই নয়, আধুনিককালের বহু সুসভ্য
মানুষ এখনও ভাবেন যে, পুরুষের লিঙ্গের সঙ্গে
অলৌকিকত্বের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বলাবাহুল্য,
আদিম মনুষ্যসমাজে যার চর্চা হত সেই টোটেমিজম
ও ভুডুইজম থেকেই এই বিশ্বাসের উৎপত্তি ঘটেছে।
পুরুষাঙ্গের আকার ও ক্ষমতা সম্পর্কে এই ধারণা
পুরুষের ভূমিকাকে যৌন কার্যকলাপের এক সক্রিয়
প্রবর্তক হিসেবে স্থানিক করেছে। মনে রাখতে
হবে যে নারীকে পরিপূর্ণমাত্রায় যৌন পরিতৃপ্তি
প্রদান করাই পুরুষের একমাত্র কর্তব্য। পুরুষ প্রধান
সমাজে এই পরিতৃপ্তি প্রদানের অক্ষমতা খুব
স্বাভাবিকভাবেই যেকোনও পুরুষের মনে সীমাহীন
ভীতির জম্ম দিতে পারে। সেই পুরুষকে মানতেই
হবে যে, শয্যাসঙ্গিনীকে পরিতৃপ্তি দিতে না
পারার ফলে সে নিজের কামনা-বাসনা
পরিতৃপ্তির উদ্দেশ্যে অন্য পুরুষের সঙ্গে মিলিত
হতে পারে, প্রধানতঃ এই ভীতি তার সমগ্র
মানসিক সত্ত্বাকে আচ্ছন্ন করবে। নিজের যৌন
অক্ষমতাকে ঢাকতে সেই পুরুষ অতঃপর তার
সঙ্গিনীর ক্ষেত্রে কিছু নিষেধবিধি প্রয়োগ করে
যার গলে সেই নারীর যৌন পরিতৃপ্তি লাভের
অধিকার অনেকাংশে বা পুরোপুরি খর্ব হয়।
যৌনজ্ঞান সংক্রান্ত এইরকম একাধিক বিভ্রান্তি
থেকেই পুরুষ একসময় ভাবতে শুরু করেছিল যে যৌন
উত্তেজনা ও পরিতৃপ্তির আদি-অন্ত সবই নিহিত
রয়েছে তার নিজের ও তার সঙ্গিনীর যৌনাঙ্গের
অভ্যন্তরে। এই ভাবনা থেকেই যে কোন যৌন
বিষয়ের বিচারের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়াল পুরুষাঙ্গ
এবং তা থেকেই পুরুষাঙ্গের আকার ও যৌন
পরিতৃপ্তির মধ্যে বিরাজমান তথাকথিত
পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ক যাবতীয় কুসংস্কার
মাহা চাড়া দিয়ে উঠল।
পুরুষের লিবিডো বা কামচেতনা এবং যৌনক্ষমতা
আনুপাতিক—এ এক বহুপ্রচলিত বিশ্বাস। এই
বিশ্বাসকে যারা ব্যাখ্যা করে তারা বলে বেড়ায়
যে পুরুষাঙ্গের আকার যত বড় হবে যৌন প্রেরণাও
ততই বাড়বে। একইভাবে লিঙ্গোত্থান ঘটানো ও
তা বজায় রাখাও পুরুষাঙ্গের বর্ধিত আকারের
ওপর নির্ভরশীল।
কোন ব্যক্তি কি পরিমাণ যৌন প্রেরণায়
অধিকারী মনস্তাত্ত্বিক পরিভাষায় তা বর্ণনা
করতে লিবিডো শব্দটি ব্যবহার করা হয়। যৌন
প্রেরপণা হল বংশপরস্পরায় প্রাপ্ত যাবতীয়
সহজাত অনুভূতি, হরমোন বা গ্রন্থি নিঃসরণ
সংস্ক্রান্ত যাবতীয় তাগিদ এবং চেতন ও অচেতন
নির্বিশেষে সবরকম মানসিক অনভূতির এক জটিল
সংমিশ্রণ। এইসব উপাদানের প্রত্যেকটিই
লিবিডোর ওপর পুরুষাঙ্গের আকারের কোনও
প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই।
তা সত্ত্বেও একজন ব্যক্তি যা দেখে তার ফলে
লিবিডো বা কামচেতনা প্রভাবিত হতে পারে।
দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, একটি শিশু হয়ত
ইচ্ছাপূর্বক বা অনিচ্ছাপূর্বক ভাবে তার মা বাবার
সঙ্গম দৃশ্য দেখে ফেলেছে, এ ক্ষেত্রে ঐ দৃশ্য তার
মানসিকতায় গভীর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে ভবিষ্যতে সেই
শিশুটি হয়ত তার বাবাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করবে
(তার বাবা তার মার সঙ্গে সহবাস করছিল এই
ব্যাপারটা সে কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে
পারবেনা) এবং এর ফলে গোটা পুরুষজাতির
ওপরেই তার মন বিষিয়ে যেতে পারে ও
কালক্রমে সে এক সমকামিতে পরিণত হতে পারে।
একই রকম ভাবে একটি ছোট মেয়ের ক্ষেত্রেও এই
ঘটনা ঘটতে পারে, অভিভাবকদের সঙ্গমকালে
বাবার মুখ থেকে উচ্ছারিত অস্ফুট ধ্বনিকে সে
যন্ত্রণাসূচক আর্তনাদ হিসেবে ধরে নিতে পারে
এবং ভবিষ্যতে সহবাস ব্যাপারটাকেই সে এক
অসামাজিক কাজ হিসেবে ভাবতে পারে।
পুং হরমোন বা বিবিধ পুং গ্রন্থির নিঃসরণের
অভাবের ফলেও কোন পুরুষের কামপ্রেরণা খর্ব
হতে পারে, অ্যাড্রেনাল বা শুক্র গ্রন্থির যে
কোন অসুখের ফলেও এই পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে
পারে। আবার মায়ের বয়ঃসন্ধিকালে এইসব গ্রন্থি
যদি অপর্যাপ্ত মাত্রায় বা পরিমাণে হরমোন
উৎপন্ন করে তাহলেও পরবর্তীকালে সেই মায়ের
গর্ভজাত পুরুষ লিঙ্গের বর্ধিত আকার নাও পেতে
পারে। যাই হোক, এই ধরণের পরিস্থিতি খুবই
বিরল।
লিবিডো এবং সেই সঙ্গে যৌন সক্ষমতা অর্থাৎ
বীর্যপাত না হওয়া পুরুষাঙ্গকে উত্থিত অবস্থায়
রাখার ক্ষমতার সঙ্গে পুরুষাঙ্গের আকারের
কোনওরকম সম্পর্ক নেই। সম্প্রতি এক সমীক্ষা
চালিয়ে যৌন বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে
এসেছেন যে, যৌন সক্ষমতার অভাব সংক্রান্ত
যেসব অসুবিধায় পুরুষেরা ভোগে তার কারণ
অধিকাংশই মানসিক। শুধু মানসিক কারণেই হঠাৎ
একজন পুরুষের মনে এই বিশ্বাসের জম্ম হতে পারে
যে, তার লিঙ্গ আকারে এতই ছোট যে, কোনও
নারীকেই সহবাসের সময় পুরোপুরি তৃপ্ত করার
ক্ষমতা তার নেই। দিনরাত এই ভাবনা মনের ভেতর
ওঠানামা করে তা একরকম অভিভাবনের কাজ
করবে এবং ফলে যদি তিনি পুরুষত্বহীনতার
ব্যাধিতে আক্রান্ত হন ত তাতে আশ্চর্য হবার কিছু
থাকবেনা।
গড়াপড়তা হিসেবে সব পুরুষের লিঙ্গের যে আকার,
কারও লিঙ্গের আকার যদি তার চাইতেও ছোট হয়
তাহলে সে যৌন ক্ষমতারহিত এমন ভাবা
অর্থহীন,বরং শক্তিমান ও বীর্যবান পুরুষদের
তুলনায় তার যৌন বাসনা অনেক বেশী দৃঢ়, তার
পৌরুষের খেত্রেও একথা সমানভাবে প্রযোজ্য।
আবার ‘পৌরুষ’ শব্দটির মধ্যেই কিছু গলদ রয়েছে
কারণ মৌলিক অর্থের অতিরিক্ত তাৎপর্য ব্যাখ্যা
করতে গিয়ে এই শব্দটি ভ্রান্তভাবে এমন কিছু
ধ্যান ধারণাকে রুপায়িত করতে প্রয়াসী হয়েছে
যেগুলো অলীক ছাড়া কিছুই নয়। একটি ধউদাহরণ
হিসেবে বলা যায়, অনেকেই মনে করে যে,
সমকামী পুরুষেরা সাধারণতঃ দেখতে বেঁটেখাটো
ও নরম স্বভাববিশিষ্ট হয়, তাদের কথাবার্তা,
চালচলন ও ভাবভঙ্গী সবকিছুই ‘মেয়েলি’ হয়ে
থাকে। কিন্তু এই ধারণা যে একান্ত ভুল তা অতীত
ইতিহাসের পাতা খুললেই প্রমাণ হবে, যেখানে
দেখা যায় জুলিয়াস সিজার, নেপোলিয়ান
বোনাপার্ট ও অ্যাডলফ হিটলারের মতো সুদেহী
বীরপুরুষেরা সবাই ছিলেন একেকজন সমকামী।
এছাড়া সৈনিক ও নাবিক বৃত্তিতে কর্মরত
পুরুষেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে সমকামিতায়
আক্রান্ত হয়ে থাকে তা ত সবারই জানা, এ বিষয়ে
নতুন করে বলারই বা কি আছে? তেমনি, যেসব
তথাকথিত শক্তিমান পুরুষ নিজেদের অত্যধিক
পৌরুষসম্পন্ন মনে করেন তারা সবাই যে সহবাস
কালে তাদের শয্যাসঙ্গিনীকে একইরকম দৈহিক
পরিতৃপ্তি দিতে সক্ষম এমন ভাবা একান্ত ভুল।
মুশকিল হল, সহবাসকালে যখন কোমল ও নরম
মানসিকতা প্রয়োজন তখনও এইসব ভাবমূর্তি
বিসর্জন দিতে পারে না। এতে তার ফলে
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের লিঙ্গোত্থান হয় না,
যদিও তাদের কেউই পুরুষত্বহীনতা বা যৌন
অক্ষমতায় আক্রান্ত নয়।
এখানে যেসব তথাকথিত বীরপুরুষের কথা বললাম,
পুরুষাঙ্গ সংক্রান্ত আরেকটি ভ্রান্ত ধারণা
তাদের মনের আনাচে কানাচে দানা বেঁধে বসে।
এরা গভীরভাবে বিশ্বাস করে যে, পুরুষাঙ্গের
আকার দেহের হাড় ও পেশীগত বিকাশের সঙ্গে
আনুপাতিক। এরা বিশ্বাস করে যে, যৌন ক্ষমতা ও
ভোগবাসনার সঙ্গে পুরুষাঙ্গের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক
আছে, আর সেই বিশ্বাস তাদের মনে এই ধারণার
জম্ম দেয় যে, দীর্ঘকায় ও শক্তিশালী পুরুষদের
পুরুষাঙ্গের আকারও খুব বড়। এই বিশ্বাসও
বলাবাহুল্য, নিছক ভ্রান্ত। দেহের আকার এবং
স্বাভাবিক বা অর্জিত পেশীগত শক্তির সঙ্গে
পুরুষাঙ্গের আকারের কোনও সম্পর্ক নেই। এই নিয়ম
অনুযায়ী একজন দীর্ঘকায় ও বলশালী পুরুষের
লিঙ্গের আকার যেমন ক্ষুদ্র হতে পারে তেমনি
একজন ছোটখাটো ও দুর্বল চেহারার পুরুষের
লিঙ্গের আকার বড় হতে পারে।
শুধু পুরুষ একাই নয়, নারীর মনেও পুরুষের লিঙ্গের
আকার ও যৌন ক্ষমতা সম্পর্কে নানারকম ভ্রান্ত
ধারণা কুংস্কারের মতো শিকড় গেড়ে বসে, যার
মধ্যে একটি হলো পুরুষের নাকের গড়ন। অনেক
নারীই এই ভ্রান্ত বিশ্বাসে বিশ্বাসী যে পুরুষের
নাক আর তার লিঙ্গের গড়ন সমানভাবে
আনুপাতিক, অর্থাৎ যে পুরুষের নাক লম্বা ও সুগঠিত
তার পুরুষাঙ্গও একই রকম বড় (এবং ক্ষেত্রেবিশেষ
খাড়া) ও সুগঠিত হতে বাধ্য।
ভ্রান্ত বিশ্বাসের শেষ নেই। এত গেল নাক,
অনেকে এও বিশ্বাস করে যে, পুরুষাঙ্গের আকার
দেখে যে কোন পুরুষের যৌন ক্ষমতা এবং তার
সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে তাও নির্ধারণ করা
সম্ভব। পাঠক পাঠিকাদের সবিনয়ে অনুরোধ করছি
এই ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস যেন মনের কোণে তারা
ভুলেও স্থান না দেন। পুরুষাঙ্গের আকার কখনোই
স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করতে
সহায়তা করে না এবং এ দুটির মধ্যে পারস্পরিক
কোনরকম সম্পর্কও নেই। বয়ঃসন্ধিকালে বৈশিষ্ট্য
প্রদায়ক স্ত্রী হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ
যতক্ষন না ঘটছে, ততক্ষণ পর্যন্ত হরমোন উৎপাদন
কোনভাবেই পুরুষাঙ্গের আকারকে প্রভাবিত
করতে পারেনা।
পুরুষাঙ্গের আকার সম্পর্কে যেসব ভ্রান্ত ধারণা
দেখা যায় তাদের অধিকাংশেরই মুলে রয়েছে
পুরুষাঙ্গের দুটি স্বাভাবিক অবস্থা। প্রথমটি হল
শিথিল অনুত্থিত লিঙ্গ, এবং দ্বিতীয়টি হল উত্থিত
লিঙ্গ। যৌন বাসনা চালিত হলে লিঙ্গের
উপরিভাগ বরাবর দুটি ‘কর্পাস ক্যানভারনোসার’
মৌচাক সদৃশ্য ফাঁপা টিস্যু বা কলা এবং লিঙ্গের
নিম্ম ভাগে অবস্থিত কর্পাস স্পঞ্জিয়োসাম—এর
থলথলে টিস্যু যখন রক্তে ভরে ওঠে তখনই পুংলিঙ্গ
বা পুরুষাঙ্গের ইরেকশান অর্থাৎ উত্থান হয়।
শিথিল অবস্থায় পুরুষাঙ্গের গড় দৈর্ঘ্য তিন থেকে
সাড়ে তিন ইঞ্চি হয়ে থাকে। উত্থিত অবস্থায়
পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য আরও দুই থেকে চার ইঞ্চি
বেড়ে যায়। কিন্তু যেসব পুরুষাঙ্গ আকারে ক্ষুদ্র
সেগুলো শিথিল অবস্থায় স্বাভাবিক পুরুষাঙ্গের
তুলনায় অনেক বেড়ে যায় এবং তা দৈর্ঘ্য দ্বিগুণও
হয়ে থাকে। শিথিল অবস্থায় যেসব পুরুষাঙ্গের
আকার উত্থিত অবস্থায় চাইতে বড় হয় (তিন থেকে
চার ইঞ্চি দৈর্ঘ্য), উত্থান হলে আনুপাতিকভাবে
তাদের বৃদ্ধি হয় অনেক কম ( উত্থিত অবস্থায় দুই বা
আড়াই ইঞ্চি বৃদ্ধি পায়) এইভাবে ছোট ছোট
পুরুষাঙ্গের মধ্যে যে পার্থক্য তা যৌন ক্ষমতা
চালনার সঙ্গে হ্রাস পায়। উত্থিত অবস্থায়
পুরুষাঙ্গের গড় মাপ হল সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে ছয়
ইঞ্চি (মূল থেকে অগ্রভাগ পর্যন্ত)।
নারীর যোনি সজক্ত ও ফাঁপা নলাকৃতি নয়। বরং
একটুকরো ঢেউখেলানো রবারের নলের সঙ্গে তার
তুলনা দেওয়া চলে যা যে কোন আকারের
পুরুষাঙ্গকে নিজের অভ্যন্তরে ধারণ করতে সক্ষম।
সন্তানের জম্মের সময় যোনি প্রসারিত ও বিস্তৃত
হয় যাতে শিশুর মাথা আর দেহ তার ভেতর দিয়ে
গলে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে। সহবাসের
প্রাথমিক পর্যায়ে যনির অভ্যন্তরভাগ পিচ্ছিল্ল
হয়ে ওঠে এবং তা এমন বিস্তৃত ও প্রাসারিত হয়
যাতে যোনি সুদৃঢ়ভাবে পুরুষাঙ্গকে আকঁড়ে
থাকতে পারে।
সহবাসকালে উত্তেজনার পর্যায়ে পুরুষাঙ্গ যখন
অভ্যন্তরে থাকে সেই সময় যোনি উপরিভাগের দুই
তৃতীয়াংশ প্রসারিত হয়। এই সময় পুরুষাঙ্গ ও যোনি
উভয়েরই অনুভুতি কিছুমাত্রায় হ্রাস পায়। কিন্তু
যোনির নিম্মভাগের এক তৃতীয়াংশের প্রসার ও
বিস্তার ঘটেনা, কাজেই এখানকার অনুভূতি হ্রাস
পায়না। আকার নির্বিশেষে এই সময় পুরুষাঙ্গ
যোনির বহির্ভাগে ক্রিয়াশীল হয় যার ফলে
নারীর যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
নারীর যৌন অনুভূতি ও উত্তেজনার মুখ্য কেন্দ্র হল
ক্লিটোরিস অর্থাৎ ভগাস্কুর। নারীর যৌন
উত্তেজনা জাগলে তার ক্লিটোরিস এবং তার
নিরাপত্তামূলক আচ্ছাদন দুটিই রক্তে পরিপূর্ণ হয়
এবং তার আকারও ওথে ফুলে। সহবাসকালে
পুরুষাঙ্গ যখন যোনির অভ্যন্তরে ক্রিয়াশীল থাকে
সেইসময় যোনির ক্ষুদ্রোষ্ঠ বা ‘মাইনর লেবিয়া’
প্রসারিত ও মুক্ত হয়। ক্লিটোরিসকে আচ্ছাদনটি
ক্ষুদ্রোষ্ঠের সঙ্গে যুক্ত এবং পর্যায়ক্রমিক
সঙ্কোচন ও প্রসারণ ক্লিটোরিসকে উত্তেজিত
করে তোলে যদিও পুরুষাঙ্গের সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ
কোনও যোগসূত্র নেই। পুরুষের দেহের নিম্মভাগের
সঙ্গে ক্লিটোরিসের ঘর্ষণের ফলেও নারীর
কামেচ্ছা যায় বেড়ে। এই প্রসঙ্গে বলতে বাধ্য
হচ্ছি যে, অধিকাংশ নারীর ক্ষেত্রেই সর্বাধিক
কামোত্তেজনামূলক অনুভূতি উদ্দীপিত হয়
ক্লিটোরিসে, এবং যৌনাঙ্গে যে কামোত্তেজনা
জাগে তা এই তুলনায় গৌণ।
অতএব দেখা যাচ্ছে যে, ওপরে বর্ণিত এইসব তথ্য
সেই অলীক ও ভ্রান্ত বিশ্বাসকে খন্ডন করতে
সমর্থ, যে পুরুষের লিঙ্গের আকার যত বড় হয় সে
তার শয্যাসঙ্গিনীকে সহবাসকালে ততই অধিক
পরিমাণে পরিতৃপ্তি প্রদানে সমর্থ হবে। আকারে
অস্বাভাবিক দীর্ঘ পুরুষাঙ্গও সহবাসকালে
যেকোন নারীর পক্ষে যন্ত্রাণার কারণ হতে
পারে, অবশ্য সেই নারী যদি এই যন্ত্রাণাকে
হাসিমুখে গ্রহণ করে ত সে ক্ষেত্রে বলার কিছু
নেই। তাঁকে আনন্দ ও বেদনার এক মিশ্র অনুভূতি
হিসেবে বর্ণনা করা চলে ।এক্ষেত্রে নারীর উরু
ওপরে ওঠালে অথবা তার পিঠ ও কোমরের
মাঝামাঝি জায়গায় একটি বালিশ রাখলে তা
উভয়ের পক্ষেই সুবিধাজনক হবে।
নারীর মানসিক অনুভূতি প্রায়শই তার শারীরিক
ফলাফলের চাইতে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে।
বীর্যত্যাগ ব্যতীত পুরুষ কমক্ষেত্রেই চরমানন্দ
অর্জন করে যা পুরোপুরি দেহগত প্রতিক্রিয়া।
কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে অনেকসময় ব্যাপারটা
অন্যরকম হয়ে দাঁড়ায়, পুরুষের বীর্যত্যাগে যে
আনন্দ, তা উপলদ্ধি করার অধিকার ও ক্ষমতা
থাকা সত্ত্বেও অনেক নারী তাঁকে গুরুত্ব দেয়না।
দেখা যায় যে নারী যাকে একান্তভাবে নিজের
মতো করে ভালবাসে তার দেহের সঙ্গে কিছুক্ষণ
যুক্ত ও একাত্ম হলেই সে চরমানন্দ অনুভব করে,
এক্ষেত্রে নারীর চরমানন্দের মুহূর্ত তার মানসিক
অবস্থার সঙ্গে একতালে বাঁধা এবং
বীর্যত্যাগজনিত আনন্দের অধিকতর প্রগাঢ়
আনন্দের জন্য ভালবাসা ও প্রিয়জনের সঙ্গে
একাত্মতার খুব প্রয়োজন।
সবেশেষে আবার বলব যে, সহবাসকালে চরমানন্দ
অর্জনের সঙ্গে পুরুষাঙ্গের আকারের কোনরকম
সম্পর্ক নেই।